।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ।।
বিবেকের ঘুম নেই
-অমর দাস
আমি বিবেক, হ্যাঁ আমার নাম বিবেক।
সারা পৃথিবীর মানুষ আমাকে এই নামেই চেনে।
আমি হাজার হাজার বছর ধরে ঘুমাতে পারি না।
যখনি আমি চোখ বুজি, দেখতে পাই আমার দেশ,
আমার পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের ভুখা মুখগুলি
চিৎকার করে বলছে “আমাদের খেতে দাও,
আমরা ক্ষুধার্ত,আমাদের পড়ণে বস্ত্র নেই, বস্ত্র দাও”।
আমার ঘুম ভেঙে যায়, আমার আর ঘুম আসে না।
কারণ আমার নাম যে বিবেক, হাজারো বছর ধরে
আমি ঘুমাতে পারিনা। হয়তো আগামী হাজার বছরেও
আমি ঘুমাতে পারবো না। আমি চোখ বুজলে দেখি,
রাস্তার দুধারে, রেল লাইনের পাশে, নদীর কিনারে
বনে জঙ্গলে আজো মানুষ ঝুপড়িতে বাস করছে।
তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।ঝড়,বৃষ্টি বন্যায়
তারা ভেসে যায়, তাদের বাঁচাবার কেউ নেই। আছে
এই অসহায় মানুষগুলোর জন্য বক্তৃতার ফুলঝুরি।
আবার আমার ঘুম ভেঙে যায়।রাত প্রায় শেষের দিকে,
না ঘুম আমার হলোনা, আমি যে অভিশপ্ত বিবেক।
আবার চোখ বুজলাম, আমি দেখতে পাচ্ছি অসহায়
কোটি কোটি বেকার শিক্ষিত যুবক পৃথিবীর একপ্রান্ত
থেকে অন্নপ্রান্তে ছুটে চলেছে একটা চাকরীর আশায়।
তারা চিৎকার করে বলছে “আমাদের চাকরী দাও”।
আমি চোখবুজে দেখতে পাই চাকরীর জন্য ওরা
বিক্ষোভ আন্দোলন করছে, পুলিশের লাঠির ঘায়ে
ওরা রক্তাক্ত হচ্ছে, মরছে, তবুও ওদের চাকরী চাই।
না কেউ এই কর্মহীন অসহায় বেকার যুবকদের দুঃখ
যন্ত্রনা বুঝবে না, কেউ ওদের চাকরী দেবেনা,ওদের
আছে যোজ্ঞতা কিন্তু নেই চাকরী নেই রোজগার,
আমি চোক বুজলে দেখি , নেতারা ওদের কাছে
ভাষন দিচ্ছে কিন্তু চাকরী দিচ্ছে না,মহামারীতে আমার
দেশের কোটি কোটি যুবকের চাকরী গেছে। ওরা কেউ
নিজের দেশের শ্রমিক কেউ বা পরিযায়ী শ্রমিক।
মহামারীতে রেল বন্ধ, সড়ক বন্ধ,পায়ে হেঁটেই
নিজের রাজ্যে পারি দিয়েছে,রেল লাইনের উপরেই
ক্লান্ত হয়ে ওরা ঘুমিয়ে পড়লো। একটা ট্রেন ওদের
সামনে এসে পড়লো, ক্লান্ত দেহগুলির ওপর দিয়েই
ঐ জল্লাদ ট্রেনটা চলে গেলো। দেখলাম অনেক গুলো
শ্রমিকের মৃত দেহ রেল লাইনে রক্তাক্ত ,বিভৎস
অবস্থায় পড়ে আছে, একটা শ্মশানের নিস্তব্ধতা।
এবার শেষবারের মতো আমার ঘুম ভেঙে গেলো।
আমি বোধহয় আর কোনদিন ঘুমাতে পারবো না।
কারণ নাম যে আমার বিবেক, জাগরুক বিবেক,
যতদিন সারা বিশ্ব জুড়ে শোষন বঞ্চনা থাকবে,আমি
ঘুমাতে পারবো না, কারণ আমি যে জাগ্রত বিবেক।